
ফার্মেসি বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বের মাঝে জনপ্রিয় একটি সাবজেক্ট। দিন দিন এর চাহিদা ক্রমশই বাড়োছে। তাই আজকে আমরা ফার্মেসি সাবজেক্ট রিভিউ (Pharmacy Subject Review) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সকল সাবজেক্টের রিভিউ পেতে এখানে ক্লিক কর।
ফার্মেসি সাবজেক্ট রিভিউ
স্টেথেসকোপ গলায় না ঝুলিয়েও মানুষের সেবা করা যায় নাকি?? অসুস্থ মানুষের সেবা, উন্নয়নের জন্য গবেষনা, সম্মান ও টাকা। কে না চায় এমন পেশা?? ডাক্তারি ব্যাতীত এই কম্বো কে দিবে?? কি হতে পারে সেটা?? জ্বী হ্যা ফার্মেসীর কথাই বলছি আমি।
উন্নত দেশগুলোতে একজন ফার্মাসিস্ট সম্মান ও মর্যাদায় কোন অংশেই ডাক্তারদের চেয়ে কম নাহ। কোন ওষুধ পেসক্রাইব করার জন্য ফার্মাসিস্ট দের মতামত নিতে হয়। যদিও বাংলাদেশে ডাক্তার রাই ওষুধ পেসক্রাইব করে “একের ভেতর দুই” নামক প্যাকেজ তৈরী করে রেখেছেন তবুও প্রথম সারির সাবজেক্ট গুলোর মাঝে ফার্মেসী উপরের দিকেই থাকে।
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে প্রথম ঢাবি তে ফার্মেসী বিভাগ খোলা হয়। পরবর্তীতে ঔষধশিল্পে ক্রমাগত উন্নতি ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরনের জন্য অন্যান্য ভার্সিটিতে ফার্মেসী খোলা হয়।
ফার্মেসি আছে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ফার্মেসী পড়ানো হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, খুলনা, জগন্নাথ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (আরও ২/১ টা থাকতে পারে) প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক, স্টেট, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট, ব্র্যাকসহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পিসিবির দ্বারা অনুমোদিত বাংলাদেশে ফার্মেসীতে স্নাতক ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হলঃ
- ফার্মাসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- ফার্মেসী বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
- ফার্মাসি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- ফার্মেসী বিভাগ, এএসএ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
- ফার্মেসী বিভাগ, গোনো বিশ্ববিদালয়
- ফার্মাসি বিভাগ, বাংলাদেশ স্টেট ইউনিভার্সিটি
- ফার্মেসী বিভাগ, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
- ফার্মেসী বিভাগ, উন্নয়ন বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয় (ইউওডিএ)
- ফার্মাসি বিভাগ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
- ফার্মেসী বিভাগ,আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
ফার্মেসি সাবজেক্টে যা যা পড়োতে হয়
ফার্মেসি মুলত রসায়ন ও বায়োলজিক্যাল বেইসড সাবজেক্ট।
- অর্গানিক কেমিস্ট্রি
- ইন অর্গানিক কেমিস্ট্রি
- ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি
- বায়োকেমিস্ট্রি
- মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি
- হিউম্যান এনাটমি
- হিউম্যান ফিজিওলজি
- মাইক্রোবায়োলজি
- সেল বায়োলজি
- ফার্মাকোগনোসি
- ফার্মাকোলজি
- ফার্মাসিটিক্যাল টেকনোলজি
- ফার্মাকো কাইনেটিক
- বায়োফার্মাকো কাইনেটিক
- ফার্মাসিটিক্যাল এনালাইসিস
- ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মাসিটিক্যাল
- ফার্মাসিটিক্যাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স
- ফার্মাসিটিক্যাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল
- ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট
- টক্সিকোলজি
- হসপিটাল এন্ড কমিউনিটি ফার্মেসী
- ম্যাথমেটিক্স এন্ড বায়ো স্ট্যাটিসটিকস
- কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল
- রিসার্চ মেথডোলজি
এত বিষয় দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে এসব বিষয় পড়তে হলে জীববিজ্ঞান (মানবদেহ) ও রসায়নে ভাল হতে হবে।
ফার্মেসি ডিগ্রী
বাংলাদেশে ফার্মেসীর উপর দুই ধরনের ডিগ্রী দেওয়া হয়।
৪ বছরের কোর্স (বি.ফার্ম) | Bachelor of Pharmacy |
৫ বছরের কোর্স (ফার্ম. ডি/ প্রফেশনাল) | Doctor of Pharmacy |
আসলে চাকরীর অবস্থা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে খুব একটা কেউ বেকার থাকে না। তবে ফার্মা ফিল্ডে চাকরী বেশ saturated হয়ে যাচ্ছে। দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী পড়ানো হয়,তাই অনেকেই শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেয়। মোটামুটি ভাল রেজাল্ট নিয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হতে পারলে শিক্ষকতায় ঢোকা ব্যাপার না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ফার্মা ফিল্ডে কাজ করছেন। তবে অনেক বেশী ছাত্র যেহেতু বের হচ্ছে তাই ভাল/প্রথম দিকের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসীতে চান্স না পেলে ফার্মেসী পড়ার আগে একবার চিন্তা করে দেখা উচিত।
দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ
একসময় প্রচুর ফার্মাসিস্ট বাইরে যেতেন। ২০০৩ সালের পর আমেরিকায় ৪ বছরের অনার্স ডিগ্রীধারীদের ফার্মাসিস্ট নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে দিচ্ছে না। অর্থাৎ কেউ যদি আমেরিকায় ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতে চান তার ৫ বছরের অনার্স লাগবে বা ফার্ম ডি লাগবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০১০-১১ সেশন থেকে ৫ বছরের অনার্স চালু হয়েছে। এখানে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করা উচিত। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ফার্মাসিস্ট যেমন ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন তেমনি বাইরের দেশে বেশিরভাগ ফার্মাসিস্ট কমিউনিটি, রিটেইল, ক্লিনিক বা হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেন আর তার জন্য লাইসেন্সধারী ফার্মাসিস্ট হতে হয়। আর ৪ বছরের অনার্স নিয়ে আমেরিকা ছাড়া অন্য যে কোন দেশে গিয়ে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। তবে আপনি পিএইচডি করতে চাইলে আমেরিকা যেতে পারেন। আমেরিকায় ফার্মেসী পড়ায় এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অন্যান্য বিষয়গুলোর তুলনায় কম হলেও প্রচুর ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার্থে(মাস্টার্স/পিএইচডি) করতে আমেরিকা, ইউকে সহ অন্যান্য দেশে যাচ্ছেন।
অনেকেই বিসিএস দিয়ে আবার সরকারী চাকরীতেও যাচ্ছেন। কেউ হয়ত খেয়াল করে থাকতে পারেন এবার ৩৩ তম বিসিএস এ সারা বাংলাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন একজন ফার্মেসী গ্র্যাজুয়েট! ফার্মেসী পড়ার একটা সুবিধা হল এ বিষয়ে পড়ে আপনি উচ্চশিক্ষার্থে লাইফ সাইন্স এর যেকোনো দিকে সুইচ করতে পারবেন। তাই আমার মতে যারা লাইফ সাইন্স পড়তে চান তাদের ফার্মেসী প্রথম চয়েজ হওয়া উচিত।ওষুধবিজ্ঞান উপভোগ করতে পারলে ভাল লাগবে অন্যথায় হতাশ হতে হবে। তবে পড়লে ভাল করে পড়তে হবে।
চাকরীর সুযোগ
- Community pharmacist
- Hospital pharmacist
- Research scientist (life sciences)
- Clinical research associate
- Higher education lecturer
- Pharmacologist
- Product/process development scientist
- Regulatory affairs officer
- Science writer
- Toxicologistc etc
লাইসেন্স কেনো লাগে
তবে হ্যা, উন্নত দেশগুলোয় ফার্মেসী তে প্র্যািকটিস করতে হলে লাইসেন্স লাগে। আর লাইসেন্সের জন্য যদি এপ্লাই করতে চাই তবে সমতূল্য ডিগ্রী চাইবে ওরা। খেয়াল করুন, আমেরিকায় ডি ফার্ম পড়ানো হয়। অথ্যাৎ বাংলাদেশের ৫ বছর মেয়াদী ফার্মেসী আমেরিকার সমতূল্য বলে ধরা হয়। তো মামুরা যদি আমেরিকায় প্র্যামকটিস করে ডলার কামানোর চিন্তা করেন, তো লুংগি কাছা মেরে পড়াশুনা শুরু করুন।
লাইসেন্স হলো আপনার প্রফেশনালিজম এর প্রমান। অর্থ্যাৎ আপনি অনুরূপ ডিগ্রী নিয়েছেন এবং পেশা বিষয়ক ব্যাপারগুলো সামাল দিতে সক্ষম ও সরকার হতে অনুমোদন প্রাপ্ত।বাংলাদেশে কাজ করার জন্য আলাদা লাইসেন্সের দরকার হয় না। তবে উন্নত দেশগুলোতে বাধ্যতামূলক।
আশাকরি ফার্মেসি সাবজেক্ট রিভিউ টি তোমাদের ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।